ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার নাম করণের ইতিহাস।

কালীগঞ্জ নামকরণ সম্পর্কে সাংবাদিক ও সাহিত্যিক মহলে মতত্বৈততা দেখা যায়।

 এক এক জন্য এক এক ভাবে তাদের মত প্রকাশ করেছেন। তবে, পরবর্তীকালে গবেষণায় দেখা যায় সপ্তদশ শতকে নলডাঙ্গার রাজ বংশের প্রতিপত্তি ও প্রভাব ছিল এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি। 

রাজারা ছিলেন কালীভক্ত। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে (১৬৫৭-১৭০৭ খ্রি.) নলডাঙ্গার রাজা চন্ডিচরণের পুত্র সুরনারায়ণের সময় চিত্রা নদীর উত্তর তীরে প্রথম কালীমন্দির প্রকিষ্ঠিত হয় বলে অনুমিত হয়। 

কেননা এ সময় নলডাঙ্গা 'মঠে' শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। অম্বিকাচরণ মুখার্জী কর্তৃক প্রণীত নলডাঙ্গা রাজ পরিবারের ইতিহাস থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। চিত্রা নদীর উত্তর তীরের এ কালীমন্দিরকে কেন্দ্র করে দোকান পাট গড়ে উঠতে শুরু করে এবং ক্রমান্বয়ে লোক বসতি বৃদ্ধি পেতে থাকে এই এলাকায়।

 ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে এখানে শস্যাদি কেনাবেচা হতে থাকে। ফলে এখনে বসতে শুরু করে বাজার, তৎপর সাপ্তাহিক হাট। এতে স্বাভাবিক কারণেই গড়ে উঠে বাণিজ্যিক গুদামঘরসহ নানা ধরনের দোকান। এই কালীমন্দিরকে কেন্দ্র করেই ক্ষুদ্র জনপদটি কালক্রমে 'কালীগঞ্জ ' নাম ধারণ করে এবং এই নামেই তৈরি হয় ভূমি ম্যাপ ১৯২৪ সালের ভূমি জরিপে। 

কয়েকশত বছরের পুরানো এ কালীমন্দির হিন্দু ধর্মীয় ঐকিহ্য বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে কালীগঞ্জ বাজারে। মন্দিরের নামানুসারে এই বাড়ির নাম হয়েছে কালীগঞ্জ কালীবাড়ি। সুতরাং এ জনপদটির নাম কালীগঞ্জ হওয়ার পিছনে নলডাঙ্গা রাজাদের নির্মিত কালীমন্দিরের গুরুত্ব সমধিক।চিত্রা নদীর পাড়ে কালীমন্দির ও বাজার গড়ে উঠে। 

"কালী" ও "গঞ্জ" এই দুই শব্দ সমন্বয়ে জনপদের নাম হয় 'কালীগঞ্জ ' এবং ইহাই বর্তমানে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।

ভৌগলিকদের মতে সমুদ্র গর্ভ থেকে জেগে উঠে ১২টি দ্বীপ।তন্মধ্যে সূর্যদ্বীপ অন্যতম। সূর্যদ্বীপ আবার তিন অংশে বিভক্ত ছিল।

 যোগীন্দ্রদ্বীপ, লাটদ্বীপ, কঙ্কদ্বীপ। ইছামতি হতে কপোতাক্ষ পর্যন্ত ভৈরব নদীর উভয়কূলে মহেশপুর, চৌগাছা প্রভৃতি স্থান জুড়ে যোগীন্দ্রদ্বীপ। 

কপোতাক্ষ হতে চিত্রা নদ পর্যন্ত লাটদ্বীপ এবং চিত্রা হতে মধুমতী পর্যন্ত পূর্বাংশ কঙ্কদ্বীপ। 

কালীগঞ্জ, বারোবাজার, বোধখানা, প্রভৃতি স্থান লাটদ্বীপের অন্তর্গত। পূর্বে এই অংশে লাটুনিয়া পরগণা ছিল। 

লাটুনিয়া পরগণার মধ্যে বারোবাজার একটি অতি প্রাচীন স্থান। বারোবাজারকে কেন্দ্র করেই কালীগঞ্জ এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠে। 

বারোবাজারের উত্তরাংশে (বর্তমান দূরত্ব ১১ কিমি.) কালীগঞ্জ এলাকায় পঞ্চদশ শতাব্দী হতে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে বলে অনুমিত হয়। 

জানা গেছে যে অতীতে নলডাঙ্গার জমিদার একটি বড় 'কালী' তৈরি করেছিলেন

(হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী) উপজেলা সদরের বর্তমান স্থানে মন্দির। কালক্রমে মন্দিরের চারপাশে 'গঞ্জ' নামে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সাধারণত এটি বিশ্বাস করা হয় যে উপজেলা নাম মাইগুট কালী এবং গঞ্জ শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে আমাদের আজকের
কালীগঞ্জ।


Comments

Popular posts from this blog

আম বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ